Saturday, October 10, 2015

Santals


Santals-সাঁওতাল 


সাঁওতাল রূপকথাঃ মানব সৃষ্টির ইতিবৃত্ত

সূর্য উদয়ের দিকে মানবের জন্ম। পৃথিবী জলময়, আর জলের নীচে মৃত্তিকা। ঠাকুরজিউ, জলজ প্রানী সকল, কাকড়া, কুমীর, হাঙ্গর, রাঘব বোয়াল, গলাদা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতি মাছ সৃজন করলেন। জলজ প্রানী সৃষ্টির পর ঠাকুর জিউ ভাবলেন এখন কি সৃষ্টি করব? সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন, মানুষ সৃষ্টি করব। তখন তিনি মাটি দিয়ে মানুষ তৈরী শুরু করলেন, মানুষের রূপ গড়া সম্পূর্ণ হল। মানুষরূপী প্রতিমা দুটিকে রৌদ্রে শুকাতে দিয়েছেন। শুকানো হলেই দুটিতে পান বায়ু সঞ্চার করবেন। ইতোমধ্যে উপর থেকে সূর্য দেতার ঘোড়া “সিঞ সাদম” মর্তে জলপান করার জন্য অবতনের সময় মনুষ্য মূর্তি দুটি তার পায়ের আঘাতে গুড়িয়ে যায়। এতে ঠাকুর জিউ অত্যন্ত ব্যথিত হলেন।
ঠাকুর জিউ সংকল্প করলেন মাটির মানুষ আর গড়ব না। পাখী সৃষ্টি করব। তারপরে তিনি তার নিজ অঙ্গের অর্থাৎ কণ্টের নীচে যে হাড় আছে তার উপরের অংশ দিয়ে হাঁস, হাসিল নামক দুটি পাখী গড়লেন। যে অংশ থেকে হাঁস গড়লেন সাওতালরা ঐ অঙ্গকে হাঁস জাং বলে। তাই অঙ্গের নামানুসারে পাখি দুটির নাম হলো হাঁস ও হাঁসিল। হাঁস-হাসিল গড়ার পর ঠাকুর জিউ তাদের হাতের তালুতে রেখে দেখছেন নিজের সৃষ্টিতে নিজে বিমোহিত। পাখি দুটিকে অত্যন্ত সুন্দর লাগছে। পাখি দুটিকে ফু দিয়ে প্রান বায়ু সঞ্চার করলেন। প্রান পেয়ে তারা জীবন্ত হয়ে গেল এবং আকাশে উড়ে গেল। তারা কেবল উড়তেই থাকল বসার কোথাও কোন স্থল নেই, বসার জায়গা নেই, তাই তারা ঠাকুর জিউ হাতের উপর এসে বসত।
সূর্য দেবের ঘোড়া সিঞ সাদম তড়ে সূতাম দিয়ে মর্তে জলপান করতে নেমে এলন। জলপান করার সময় তার মুখ থেকে কিছু ফেনা জলের উপর ছড়িয়ে গেল। এ ফেনা জলের উপর ভেসে থাকল। জলের উপরে এ ফেনা জমাট বেধে ফেড় সৃষ্টি হল। তখন ঠাকুর জিউ পাখি দুটিকে বললেন যাও তোমরা ওই ফেনার উপরে গিয়ে বস। পাখি দুটি তখন তার উপরে বসল। বসলে পর ঐ জমাটবদ্ধ ফেনা তাদেরকে নৌকার মত ভাসিয়ে নিয়ে বেড়ায়। একদিন তারা ঠাকুরজিউকে নিবেদন করল ঠাকুরজিউ পরিভ্রমন করছি মনের আনন্দে, কিন্তু আহার পাচ্ছি না।
তখন ঠাকুর জিউ কুমীরকে ডেকে পাঠালেন, কুমীর এলো। কুমীর ঠাকুরজিউকে বিণীত ভাবে বললেন ঠাকুর, কেন আমাকে স্মরণ করেছেন? ঠাকুর বললেন মাটি উত্তোলন করতে পারবে? কুমীর জলের নীচ থেকে কামড়ে মুখে করে মাটি আনতেছিল কিন্তু সব গলে গেল। কুমীর মাটি আনতে ব্যর্থ হল।
তারপরে ঠাকুর জিউ গলদা চিংড়িকে ডাকলেন। সে আসল, এসে ঠাকুরজিউকে বললেন, ঠাকুর আমাকে কেন তলব করেছেন? ঠাকুর বললেন মাটি তুলতে পারবে? গলদা চিংড়ি জবাবে বলল আপনি যদি বলেন তবে নিশ্চয় তুলতে পারব। তখন চিংড়ি গভীর জলে ডুব দিল, ডাটম করে মাটি তুলে আনতেছিল কিন্তু সব গলে গেল।
তখন ঠাকুর রাঘব বোয়ালকে ডাকলেন, সে এল। এসে ঠাকুরজিকে নিবেদন করল ঠাকুর কি প্রয়োজনে আমাকে স্মরণ করেছেন? ঠাকুর তাকে বলল, মাটি তুলতে পারবে? রাঘব বোয়াল উত্তর দিল আপনি যদি বলেন তাহলে আমি মাটি তুলতে পারব। তখন রাঘব বোয়াল গভীর জলের নীচে মাটিতে কামড় দিয়ে কিছু মাটি মুখে ও কিছু পিঠে নিয়ে রওয়ানা হলো কিন্তু সব গলে গেল। তখন থেকে বোয়াল মাছের আশ খুলে গেল বা আশ আর নেই।
তখন ঠাকুরজি ধিরি কাটকমকে (কাকড়া) ডাকলেন। ধিরি কাটকম হাজির হল। এসে ঠাকুরজিকে বললেন আমাকে কেন ডেকেছেন ঠাকুরজি? ঠাকুরজি তাকে বলল মাটি তুলতে পারবে? ধিরি কাটকম উত্তর দিল আপনি বললে নিশ্চয় তুলতে পারবো। তখন ধিরি কাটকম গভীর জলে ডুব দিল এবং ডাটক করে মাটি আনতেছিল কিন্তু সব গলে গেল, তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল।
তারপরে ঠাকুরজিউ কেঁচোকে ডাকলেন কেঁচো আসল। এসে ঠাকুরজিকে বিনীত ভাবে বললেন ঠাকুরজি কি প্রয়োজনে আমাকে স্মরণ করেছেন। ঠাকুরজি তাকে বলল, জলের গভীর তলদেশ থেকে মাটি তুলতে পারবে? কেঁচো ঠাকুরজিকে প্রতি উত্তর করল আপনি অনুমিত দিলে তুলতে পারি যদি জলের উপরে কূর্ম (কচ্ছপ) স্থির হয়ে থাকে। তখন ঠাকুরজি কচ্ছপকে ডাকলেন সে আসল, এসে ঠাকুরজিকে বললেন ঠাকুর কেন আমাকে ডেকেছেন। ঠাকুরজি বললেন কেউ মাটি তুলতে পারছেনা কেঁচো মাটি তোলার দায়িত্ব নিয়েছে যদি তুমি জলের উপরে স্থির হয়ে দাড়াও। কচ্ছপ ঠাকুরজির প্রতি উত্তর দিল, আপনি যদি আদেশ করেন, তাহলে আমি দাড়াব। তখন কচ্ছপ জলের উপরে স্থির হলেন স্থির হলে পর, ঠাকুরজি তার চার পায়ে শিকল বেঁধে টেনে দিলেন। এমনি অবস্থায় কচ্ছপ জলের উপরে স্থির হলেন। তখন কেঁচো মাটি তোলার জন্য গভীর জলে ডুব দিলেন, মাটির স্পর্শ পেলেন, তার লেজ এর প্রান্ত কচ্ছপের পিঠে অন্যদিকে মুখ দিয়ে সে মাটি খেতে শুরু করল এবং কচ্ছপের পিঠে মাটি রাখতে লাগল। সে মাটি সর এর মত (Cream এর মত)  জমতে শুরু করল। কচ্ছপ এক নাগাড়ে মাটি তুলছেই, কচ্ছপের পিঠ মাটিতে পূর্ণ হলো। তখন কেঁচো মাটি তোলা বন্ধ করল এবং বিশ্রাম নিল।
তারপরে ঠাকুরজিউ উত্তোলিত মাটিতে মই টেনে দিলেন, মই টানতে টানতে কিছু মাটি শক্ত হলো। শেষে মইয়ে লেগে থাকা মাটি তিনি ঝেড়ে ফেললেন এ ঝেড়ে মাটি গুলোতে পাহাড়, পর্বত সৃষ্টি হলো। মাটি তোলা শেষ পলে পর, মাটির উপরে সে “ফেড় দা” Cream এর মত জল নির্গত হচ্ছিল তা শুকিয়ে গেল তখন ঠাকুরজি ঐ ‘ফেড়” লাগানো মাটিতে (সিরাম বীজ) বিন্নার বীজ ছড়িয়ে দিলেন; তা অঙ্কুরিত হলে পর তিনি দুর্বা ঘাসের বীব ছড়িয়ে তা জন্মালেন, তারপরে কারাম বৃক্ষ তারপরে তপে সারজম (এক ধরণের শালগাছ) লাকড় আতনা, লাডেয়া মাতকত। তারপরে তাবৎ লতাগল্ম বৃক্ষরাজী সৃষ্টি করলেন। ধরিনী শক্ত হল। যেখানে যেখানে জল ছিল সেখানে মাটির চাপা দিলেন আর যেখানে যেখানে জলের ধারা (ভুমবুক) নির্গত হচ্ছে সেখানে সেখানে বড় বড় পাথর চাপা দিলেন।
তারপরে চতুষ্পদ প্রানী সকল ও দ্বিপদ পক্ষী সকল সৃষ্টি করলেন। মাটির পোকা সকল (হাসা গান্ডার) সৃষ্টি করলেন।
মানব সৃজনঃ
অপরূপ ধার্তি (পৃথিবী) সৃষ্টি হল। দিন যায়; এক সময় হাঁস-হাসিল সিরাম দান্ধিতে (বিন্না ঝোপে) বাসা বাধল, হাসিল দুটি ডিম প্রসব করল। হাসিল ডিমে তা দেয়, আর পুরুষ হাসটি খাদ্য সংগ্রহ করে আনে এভাবে করতে করতে একদিন ডিম ফুটল। আশ্চর্য! ডিম থেকে দুটি মানব শিশুর জন্ম হয়েছে। একটি পুরুষ শিশু ও অন্যটি মেয়ে শিশ।
এমনি সন্ধিক্ষণে হাস-হাসিল মহা চিন্তিত। কর্তব্য বিমুঢ় তখন তারা হমর সুরে (বিলাপ করে)
হায় হায় জালা পুরিরে
হায় হায় নুকিন মানেআ
হায় হায় বুসৗড় আকান কিন,
হায় হায় নুকিন মানেআ
হায় হায় তকারে দহকিন।
হায় হায় এহো ঠাকুরজিউ
হায় হায় মারাং ঠাকুরজিউ।
হায় হায় বুসৗঢ় আকানকিন
হায় হায় একিন মানেআ
হায় হায় তকারে দহকিন।
বঙ্গানুবাদ-
হায় হায় এ দুটি মানব
হায় হায় জন্ম নিয়েছে
হায় হায় এ দুটি মানব
হায় হায় কোথায় রাখিব।
হায় হায় ওহে ঠাকুরজী
হায় হায় পরম ঠাকুরজী
হায় হায় জনম নিয়েছে
হায় হায় এ দুটি মানব
হায় হায় কোথায় রাখিব।
হাঁস-হাসিলের করুন আর্তি, আকুল আবেদনে ঠাকুরজি সাড়া দিলেন। তাদের সামনে প্রকট হলেন তারা ঠাকুরজিকে নিবেদন করল কেমন করে এ মানব দুটিকে বাচাব? ঠাকুরজিউ তাদেরকে তুলো দিলেন এবং বললেন তোমরা যা যা খাও তার রস বের করে এ তুলো ভিজিয়ে নিও এবং এদেরকে চুষে খাওয়াবে। তারা ঠাকুর জিউ এর শিক্ষা মতে অনুরুপ ভাবে খাওয়াতে লাগল। শিশু দুটি চুষে খেয়ে হাটতে শিখল। শিশু দুটি বড় হতে হতে হাস-হাসিল চিন্তিত হল। বড় হলে এদেরকে কোথায় রাখা হবে।
তখন তারা আবার ঠাকুরজিউকে স্মরণ করলেন; তখন ঠাকুরজিউ তাদেরকে উপদেশ দিলেন তোমরা উড়ে গিয়ে এদের থাকার জন্য জায়গা পচ্ছন্দ করে আস। তখন তারা সূর্য অস্তের দিকে উড়ে গেল। প্রকৃতির নৈসর্গ লীলা ভূমি (হিহিড়ি-পিপিড়ি) এলাকাটি পছন্দ করল। ফিরে এসে তারা ঠাকুরজিউকে তাদের পছন্দমত জায়গার বিবরণ জানাল। তখন তিনি তাদেরকে বললেন অতি উত্তম। এখন তোমরা এদেরকে সেখানে নিয়ে যাও। তখন হাঁস-হাসিল শিশু দুটিকে পিঠে করে উড়ে নিয়ে যেখানে পৌঁছে দিল।
যেহেতু তাদের জন্মস্থান থেকে সূর্য অস্তের দিকে তাদেরকে পৌঁছে দেয়া হল, এই জন্যই এ পুরা কাহিনী মতে বলা হয়ে থাকে মানবের জন্ম সূর্য উদয়ের দিকে। হিহিড়ি-পিপিড়ি মানব শিশু দুটিকে পৌঁছে দেয়ারপর হাঁস-হাসিল দুটি কোথায় অন্তর্ধন হলেন সে বিষয়ে কোন বর্ণনা নেই। হয়তোবা মানব জন্মের লীলার জন্যই তাদের আগমন ঘটেছিল।

সাঁওতাল

সাঁওতালদের উৎসব
সাঁওতালরা পূর্বভারত ও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির একটি। তারা অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠির অন্তর্গত একটি ভাষা সাঁওতালী ভাষায় কথা বলে ।
সাঁওতালরা দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলে বাস করে। দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট , ফুলবাড়ি, চিরিরবন্দর , কাহারোল এবং রংপুর জেলার পীরগঞ্জে সাঁওতালরা অধিক সংখ্যায় বাস করে। রাজশাহী এবং বগুড়া অঞ্চলে কিছু সংখ্যক সাঁওতাল আছে। প্রাচনিকাল থেকেই সাঁওতালরা এদেশে বসবাস করে আসছে। এরা মোট ১২ টি গোত্রে বিভক্ত সাঁওতালী ভাষায় এ গোত্র গুলো ‘পারিস‘ নামে অভিহিত যেমন – হাঁসদা, সরেন,টুডু, কিসকু, র্মুমু, মার্ড়ী, বাস্কে, ইত্যাদি ।
সাঁওতালদের মধ্যে অধিকাংশই খ্রিষ্টান ধর্মের হলেও কিছু কিছু হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসী সাঁওতাল পরিবার তাদের আদি সংস্কৃতি এবং ধর্মকে টিকিয়ে রেখেছে। এসব আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক জীবন ও ধর্ম চর্চায় উজ্জ্বল রঙ্গীন ফুলের কদর অনেক বেশি। বিশেষ করে লাল জবা ফুল তাদের পুজা পার্বনে এবং উৎসব পরবে বেশি মাত্রায় ব্যবহৃত হয়। এদের মেয়েরা রঙ্গীন শাড়ি পড়ে চুলে রঙ্গীন ফুল গুঁজে নাচে গানে উৎসব পালন করে থাকে। স্ত্রী পুরুষ উভয়েই সামাজিক রীতি হিসেবে শরীরে উল্কি আঁকে। এদের বিয়ে হয় ধুম ধামে অনেকটা সাঁওতালদের বিয়ের অনুকরনে। বিয়েতে নাচ গান এবং ভাত পচানো ওদের বাড়ীতেই তৈরি করা চোলাই মদ থাকতেই হবে। এই মদ আর পাঁঠা বা শুকুরের মাংসের সাথে মোটা চালের ভাতের ভোজ দিয়েই চলে বিয়ের বাড়ীর আহার পর্ব। আদিবাসীদের মধ্যে স্ত্রী পুরুষের এক সঙ্গে দুই স্ত্রী বা স্বামী রাখার বিধান এদের নেই। এখনও এদের সমাজে প্রাচীন পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এদের মধ্যে বিধবা বিয়ে এবং ঘরভাঙ্গা বিয়ে প্রচলিত আছে, তবে শিশু বিয়ের প্রচলন কম।আগে গারোদের মত দেকাচোঙ ঘর এবং সাঁওতালদের আখ্রা ঘরের মতো বিবাহযোগ্য তরুণ তরুনীরা বিয়ের আগে পরস্পরের সাথে মেলা মেশার সুযোগ পেতো। বড় গোলা ঘর, যাকে বলা হয় ধুমকুরিয়া। এই গোলোঘরে নিদৃষ্ট পরবের দিনে একসঙ্গে একাধিক বিবাহযোগ্য নারী পুরুষ একত্রে বসে তাদের পছন্দ মতো পাত্র পাত্রী নির্বাচন করতো। পরে পরিবারের লোকজনের সম্মতিতে বিয়ে হতো। এখন আর সে প্রথার প্রচলন বা সুযোগ নেই।তবে পুরুষদের চেয়ে মেয়েরা বেশী পরিশ্রম করে এবং কৃষি কাজেও তারা অত্যন্ত দক্ষ।
শিকারে সাঁওতালী যুবক
১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুসারে বাংলাদেশে সাঁওতালদের মোট সংখ্যা ২০২৭৪৪, ২০১২ সাল নাগাদ ওদের সংখ্যা হয়ে দাঁড়ানোর কথা কমপক্ষে ২৭১৪৮৫; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওদের সংখ্যা তিন লাখের বেশি হবে। কিন্তু ১৯৪১ সালের ব্রিটিশ ভারতের আদমশুমারি রিপোর্ট দেখলে পাওয়া যায় তখন সাঁওতালদের সংখ্যা ছিল ৮২৯০২৫ জন যার ভেতরে পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশে সাঁওতাল ছিলো ২৮২৬৮২ জন। অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে সাঁওতাল এর সংখ্যা যেভাবে বাড়ার কথা সেভাবে বাড়ে নি, উল্টো কমেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভূমি থেকে উচ্ছেদ, নানা অত্যাচার, শোষণ-নিপীড়ন, হত্যা-ধর্ষণ ইত্যাদি কারণে এরা দলে দলে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয় । এদের অনেকেই চলে গেছে পাশের দেশ ভারতে যেখাতে সাঁওতালদের বর্তমান সংখ্যা ৬ লাখের মতন, আর নেপালে ৫০ হাজারেরও বেশি।
অস্ট্রিক গোষ্ঠির সাথে সাঁওতালদের চেহারায় ব্যাপক মিল আছে। এদের দৈহিক বৈশিষ্ট্য হলঃ খজর্বাকৃতি, মাথার খুলি লম্বা থেকে মাঝারি, নাক চওড়া ও চ্যাপ্টা, গায়ের রঙ কালো এবং ঢেউ খেলানো । ভাষাগত পরিচয়ে এরা অস্ট্রো-এশিয়াটিক। নৃতাত্ত্বিকদের ধারণা এরা ভারতবর্ষের আদিম অধিবাসীদের অন্যত্ম। এক সময় এরা বাস করতো উত্তর ভারত থেকে শুরু করে প্রশান্ত মহাসাগরের ইস্টার দ্বীপ পর্যন্ত। আনুমানিক ৩০ হাজার বছর পূর্বে এরা ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল। আর সাঁওতালরা যে আর্যদের আগে থেকেই ভারতে আছে সে ব্যাপারে কোনই দ্বিমত নেই। এদের আদি নিবাস হয়েছিল হাজারিবাগ, মালভূম (চায়-চাম্পা), এবং বিহারের আশ-পাশের বিভিন্ন অঞ্চল। মোঘল আমলে এরা হাজারীবাগ, মালভূম হতে বিতাড়িত হয়ে ওড়িষ্যার সাঁওতাল পরগণায় চলে আসে।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা দুই সাঁওতালী রমণীর ছবি
সাঁওতালরা আজও নিজেদেরকে বলে ‘হোড়’ কিংবা ‘হেড়’ যার অর্থ মানুষ আর ওদের কারমণকারী মানুষদেরকে বলে ‘দিকু’ যার অর্থ আক্রমণকারী কিংবা ডাকাত। ওরা প্রকৃত অর্থেই নিপীড়িত এক গোষ্ঠী। অশিক্ষিত সাঁওতালদের সরলতার সুযোগ নিয়েছে শিক্ষিত ধনীক গোষ্ঠী। জমিদার, মহাজন, প্রশাসক ও স্থানীয় প্রভাবশালী হিন্দু-মুসলমান ওদেরকে করেছে শোষণ আর ইংরেজরা করেছে অত্যাচার।
বাংলাদেশে সাঁওতালদের আগমন ঘটেছে নানা কারণে। এর মধ্যে জমিদার-মহাজনেরা যেমন তাদের কাজের প্রয়োজনে সাঁওতালদের উত্তরবঙ্গে এনেছেন, তেমনি এরা নিজেরাই জীবিকার সন্ধানে, খাদ্য ও বাসস্থল সংকটে, এমনি কি ১৮৫৫ সালে সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণে ইংরেজ কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে এ অঞ্চলে বাসস্থান গড়েছে।
Since how long the Santals landed in the territory of present Bangladesh, is not precisely known.  Some believe that the Kherwars[15] reached the land of Bengal immediately after the first clashes with the invading Aryan tribes (2500 B. C.).  With every probability the Santals landed in Bangladesh with their actual ethnic identity, not after 1000 B. C.  It is probable that the Santals scattered throughout Bengal at the time of the Muslim invasion of this region during the last decades of the twelfth century or at the beginning of thirteenth century.  In the words of Fr. Luizi Pussetto:  “The Santals retired progressively toward more calm regions or where it was more easy to defend [themselves] from the invaders.
In later times, with the historic Santal Revolution in 1855 under the British Colonial rule in the Indian subcontinent, when 30,000 thousand Santals are believed to have been killed,[17] it is beyond any doubt that many of the Santals were dispersed into distant lands and geographically isolated territories.  Many of them even crossed the river Ganges and end up in the East, the part of present Bangladesh.  Many think that the early Santals came to North Bengal in search for job opportunities, especially when the railway tracks were under construction during the British rule in the second half of the 19th century.  This may be one of the reasons that most Santals in Bangladesh are found settling on both sides of the railway lines from North to South.

Regarding the name Santal, opinions differ among the scholars.  For Skrefsrud, the name Santal is a corruption of Saontar, and was adopted by the tribe after their sojourn for several generations in the country around Saont in Midnapur.  W. B. Oldham opined that Santal is an abbreviation of Samantawala, which has its etymology from Sanskrit Samanta, another name given to the country around Saont.  O’Malley is of the opinion that Santal is an English form adopted from Hindi which corresponds with the form Saotal used by the Bengali speaking people.  Sir John Shore designated Santals as Soontars while for McPherson it is Saungtars.  For P. O. Bodding it would derive from Sant or Sat or Sar, a region of the district of Midnapur, in India.  Bishop J. Obert who had long experience working with the Santals looked at this from different perspective.  According to him, Set would mean seven, number referred to the seven rivers of a region:  Country of the seven rivers. 

Most Anthropologists agree that Santal is a name given to this tribe by non-Santals.  However, Santals prefer to call themselves hoŗ meaning “human being or person.”  For the Santals the concept hoŗ bears a rich connotation to mean a person with qualities of intellect, of knowledge, of wisdom; they refer themselves as a tribe with dignity and full human potentiality.  The Santals are proud of their identity that defines the traits of solidarity and uniqueness as a group. 

In Bangladesh, the Santals are found mostly in North Bengal (Northern part of Bangladesh) especially in the then greater districts of Dinajpur, Rangpur, Bogra, and Rajshahi.  According to the census of 1881, the Santals resulted present in the district of Khulna, Pabna and Chittagong in the south.  Many say that the Santals, who are in Sylhet, are the ones who migrated from the districts mentioned above and came here mainly to work in the tea gardens as laborers.  In short, the Santals of Bangladesh are almost all derived from those emigrated from the Santal Pargana in India and nothing distinguishes them from those who are still living there, with the exception, perhaps of the use of Bangla words that are Santalized.   In recent times some of the Bangladeshi Santals also started going abroad taking employment opportunities.

No comments:

Post a Comment